স্বাধীনতা দিবস:
দিনটি ছিল ১৯৪৭ সালের ১৫-ই আগস্ট ব্রিটিশ শাসনের পরাধীনতার শিকল থেকে মুক্ত হয়ে আমাদের ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ করে। সেই দিনটিকে স্বরণীয় করে রাখতে প্রতি বছর ১৫-ই আগস্ট ভারতে স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সাথে সাথে জাতীয় সঙ্গীত,সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রভৃতির মাধ্যমে গোটা দেশে অত্যন্ত জাঁকজমকভাবে স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়। এই বছর ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেশ জুড়ে পালিত হচ্ছে "আজাদি কা অমৃত মহোৎসব "। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার প্রত্যেক বাড়িতে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের আহ্বান জানিয়েছেন।জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সময় জাতীয় পতাকাকে সম্মান প্রদর্শনে বেশ কিছু বিধি মানতে হয়। ২০২২ সালে কেন্দ্রীয় সরকার এই বিধিতে বেশ কিছু বদল এনেছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেগুলি কী কী?
ফ্ল্যাগ কোডে বদল:
ফ্ল্যাগ কোড অব ইন্ডিয়া ২০২২ এর দ্বিতীয় ভাগের ২.২ অনুচ্ছেদের ১১ নম্বর ধারা অনুযায়ী ভারতীয় পতাকা সকল ভারতীয় নাগরিকের বাড়িতে যে কোনও সময়ই তোলা যেতে পারে। এমনকি রাতের বেলাতেও। তবে এই পতাকার আকৃতি বড় হতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যাতে ছেঁড়া পতাকা উত্তোলন করা না হয়।
পূর্বের নিয়ম ও বর্তমান নিয়মের মধ্যে পার্থক্য-
পুরাতন নিয়মানুযায়ী কেবলমাত্র সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা যাবে। এছাড়াও পলিস্টারের তৈরি পতাকা বা মেশিনে তৈরি হয়েছে এমন পতাকা উত্তোলনের অনুমতি ছিল না। কিন্তু এখন হাতে বা মেশিনে তৈরি সব ধরনের পতাকাই উত্তোলন করা যাবে।
জাতীয় পতাকা উত্তোলনের বিধিসমূহ:
- ভারতের জাতীয় পতাকা হাতে তৈরি বা হাতে বোনা খাদি সিল্ক/উল/তুলো দিয়ে তৈরি হওয়া উচিত।
- হাতে কাটা, হাতে বোনা, মেশিনে তৈরি করা তুলো, সিল্ক, বা খাদির পতাকা উত্তোলন করা যাবে।
- কোনও অবস্থাতেই জাতীয় পতাকাকে মাটিতে রাখা যাবে না।
- পতাকায় কোনও শব্দ বা অক্ষর লিখতে পারবেন না।
- জাতীয় পতাকার রঙের পোশাক কখনই পরা উচিত নয়।
- কোনও বাণিজ্যিক কাজে যাতে জাতীয় পতাকা ব্যবহৃত না হয়।
- ছিঁড়ে যাওয়া বা খারাপ হয়ে যাওয়া পতাকা উত্তোলন করা যাবে না।
- জাতীয় পতাকার উপরে কোনও ধরনের সুতোর কাজ বা লেখালিখি করা যায় না। রুমাল, বালিশের ওপর ব্যবহার করা যায় না তেরঙা পতাকা।
- জাতীয় পতাকাকে টেবল ঢাকার কাপড় হিসাবে ব্যবহার করতে নেই।
- কোনও স্মৃতিসৌধ বা মূর্তি ঢাকা যাবে না জাতীয় পতাকা দিয়ে।
- জাতীয় পতাকা এমনভাবে তুলে রাখা উচিত যাতে ওড়ার সময় তা জমির ময়লা, বা কাদা জল স্পর্শ না করে।
- কোনও কারণে জাতীয় পতাকা ছিঁড়ে গেলে তা আর তোলা উচিত নয়। সেই ক্ষেত্রে যথাযোগ্য সম্মানের সঙ্গে তা পুড়িয়ে ফেলা উচিত।
- জাতীয় পতাকার পাশে একই উচ্চতায় কোনও পতাকা রাখতে নেই।
- জাতীয় পতাকার সঙ্গে যদি অন্য কোনও পতাকাও থাকে, সেক্ষেত্রে যাতে অবশ্যই জাতীয় পতাকার স্থান থাকে সব সময় শীর্ষে।
- যে দণ্ডে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে সেই দণ্ডে যেন অন্য কোনও পতাকা না থাকে।
- গেরুয়া রং সবসময় উপরে থাকবে।
- কোনও ব্যক্তির মৃতদেহের সঙ্গে কফিনে বা চিতায় জাতীয় পতাকা ব্যবহার করা যাবে না।
- আকারে অবশ্যই আয়তক্ষেত্রাকার হতে হবে জাতীয় পতাকাকে। দৈর্ঘ্য, প্রস্থে ৩:২ অনুপাতে তৈরি করতে হবে পতাকা।
- সরকারি কোনও নির্দেশ না থাকলে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করে রাখতে নেই।
- কেউ প্রকাশ্যে বা যেকোনও স্থানে জাতীয় পতাকা পোড়ালে কিংবা পদদলিত করলে তা আইনত অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
- কোনও ব্যক্তি জাতীয় পতাকাকে লিখিত বা মোখিকভাবে অসম্মান করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হবে।
- জাতীয় পতাকাকে অসম্মানিত করলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে জরিমানা ছাড়াও তিন বছরের কারাদণ্ডের আইন রয়েছে। 'Prevention of Insults to National Honour Act, 1971' অনুসারে ওই ব্যক্তির কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয়ই হতে পারে।
সবাই কে ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আশা করি এই প্রতিবেদন আপনাদের ভালো লেগেছে। ভালো লেগে থাকলে অবশ্যই আপনার বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করুন। বন্দেমাতরম 🇮🇳
0 Comments