বাসন্তিকস্বপ্নম নাট্যাংশ অবলম্বনে রাজা ইন্দ্রবর্মার চরিত্রের পরিচয় দাও।
অথবা,
রাজা ইন্দ্রবর্মার চরিত্র বিশ্লেষণ করাে।
উত্তর- পন্ডিত শ্রী কৃষ্ণমাচার্য বিরচিত "বাসন্তিকস্বপ্নম" নাট্যাংশের একটি অন্যতম মুখ্য চরিত্র হল রাজা ইন্দ্রবর্মার চরিত্র।
নাটকের শুরুতেই আমরা রাজাকে যে-রপে দেখি, তাতে রাজোচিত চারিত্রিক গুণের চিহ্নমাত্র নাহ। তিনি একজন প্রেমকাতর রাজা। আর মাত্র চারদিন পর তিনি কনকলেখাকে অঙ্কশায়িনীরূপে পাবেন, কিন্তু চারটে দিনও তিনি ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে পারছেন না। কনকলেখা যেখানে নির্বিকার—নির্লিপ্ত, সেখানে রাজার এই ধৈর্যহীনতা নিন্দনীয়। "অহং দীনমানসঃ", “বসামি মদনাক্ৰান্তঃ”, “সােহস্মি পৰ্যুৎসকঃ সখি”, "নাড়িকাহপি যুগায়তে" -ইত্যাদি বাক্যগুলি ধীরােদাত্ত নায়কের মুখে শােভা পায় না, বরং ন্যক্কারজনক। তিনি অনুষ্ঠাতব্য উৎসবের স্বপ্নে বিভাের। তিনি কনকলেখাকে জানিয়েছেন যে, বিবাহ উপলক্ষ্যে তিনি এমন এক বর্ণাঢ্য সমারােহ করবেন, যা অদৃষ্টপূর্ব।
তাঁদের আলােচনায় ছেদ পড়ল বৃদ্ধ ইন্দুশর্মা ও কৌমুদীর উপস্থিতিতে। এরপরই নাট্যকার ইন্দ্রবর্মাকে আমাদের কাছে দেশের রাজারূপে তুলে ধরেছেন। বৃদ্ধ ইন্দুশর্মার কন্যার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযােগ। কন্যা কৌমুদী পিতার নির্বাচিত পাত্র মকরন্দকে বিবাহ না করে প্রণয়ী বসন্তকে বিবাহ করতে বদ্ধপরিকর। সে স্বৈরাচারিণী। অতএব সময়বিরুদ্ধাচরণের সমুচিত শাস্তি সে রাজার কাছে প্রার্থনা করেছে।
রাজা কৌমুদীকে পিতার মত অনুবর্তন করার জন্য বার বার উপদেশ দিয়েছেন। পিত্রাজ্ঞা লঙ্ঘন করলে কৌমুদীকে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবনকৌমার্যের ভীতি প্রদর্শন করেছেন। কিন্তু তিনি পিতা ইন্দুশর্মাকে একবারের জন্যও পুনর্বিবেচনা করার উপদেশ দেননি, বা অনুরােধ করেননি। স্বীকার করি দেশাচার বা দেশের সংবিধানকে মান্যতা দিতে রাজা বাধ্য। কিন্তু সবার ওপর আছে মানবধর্ম। রাজা মানবধর্ম লঙ্ঘন করেছেন, হৃদয়হীনতার পরিচয় দিয়েছেন।
রাজা ইন্দ্রবর্মা নিজে প্রেমকাতর। কিন্তু কৌমুদীর শুদ্ধ, পবিত্র প্রেমকে বিন্দুমাত্র মর্যাদা দিলেন না। কৌমুদী রাজাকে দৃপ্ত কণ্ঠে জানিয়েছে—“তদর্থং জীবিতমপি ত্যজেয়ম্। যাবদায়ুঃ পরিণয়ং বিনাপি বসেয়ম।” তৎসত্ত্বেও রাজা একবারের জন্যও কৌমদীর এই নিখাদ প্রেমকে স্বীকৃতি না দিয়ে, ইন্দুশর্মাকে পুনর্বিবেচনার জন্য উপদেশ না-দিয়ে “তাতমেবাসর, নােচেদ্ভজ মরণম”—এই বিচারের বাণী শুনিয়ে চরম নির্দয়তার, হৃদয়হীনতার পরিচয় দিয়েছেন।
আরো পড়ুন: কৌমুদীর চরিত্র বিশ্লষণ করো।
0 Comments