আজ এই আর্টিকেলে দ্বাদশ শ্রেণীর সংস্কৃত বিষয়ের 'গঙ্গাস্তোত্রম' কবিতার প্রতিটি লাইনের শব্দার্থ সহ বঙ্গানুবাদ দেওয়া হল। যদি কেবলমাত্র প্রতিটি শ্লোকের মানে দেখতে চান, তাহলে শ্লোকের নীচে বঙ্গানুবাদ অংশটি লক্ষ করুন।
শ্লোক-১
দেবি সুরেশ্বরি ভগবতি গঙ্গে ত্রিভুবনতারিণি তরলতরঙ্গে।
শঙ্করমৌলিবিহারিণি বিমলে মম মতিরাস্তাং তব পদকমলে।।
সন্ধিবিযুক্ত অন্বয়
(হে) দেবি, সুরেশ্বর, ভগবতি, ত্রিভুবনতারিণি, তরলতরঙ্গে, শঙ্করমৌলিবিহারিণি, বিমলে, গঙ্গে তব পদকমলে মম মতিঃ আস্তান।
শব্দার্থ
দেবি (দেবি) সুরেশ্বরি (দেবশ্রেষ্ঠা) ভগবতি (ভগবতী) ত্রিভুবনতারিণি (স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল এই ত্রিভুবনের উদ্ধারকর্ত্রী) তরলতরঙ্গে (চঞ্চল তরঙ্গবিশিষ্ট) শঙ্করমৌলিবিহারিণি (শিবের মস্তকে ভ্রমণকারিণী) বিমলে (পবিত্র) গঙ্গে (গঙ্গানদী) তব (তোমার) পদকমলে (পাদপদ্মে) মম (আমার) মতি (মন) আস্তাম্ (থাকুক)।
বঙ্গানুবাদ
(হে) দেবী, দেবশ্রেষ্ঠা, ভগবতী, ত্রিভুবনের উদ্ধারকারিণী, চঞ্চল তরঙ্গবিশিষ্টা, শিবের মস্তকে ভ্রমণকারিণী, পবিত্র গঙ্গা, তোমার পাদপদ্মে আমার মতি থাক।
শ্লোক-২
ভাগীরথিসুখদায়িনি মাতঃ তব জলমহিমা নিগমে খ্যাতঃ।
নাহং জানে তব মহিমানং পাহি কৃপাময়ি মামজ্ঞানম্।।
সন্ধিবিযুক্ত অন্বয়
ভাগীরখি সুখদায়িণি মাতঃ তর জলমহিমা নিগমে খ্যাতঃ । অহম্ তব মহিমানম্ ন জানে। কৃপাময়ি অজ্ঞানম্ মাম্ পাহি
শব্দার্থ
ভাগীরথি (হে ভাগীরথি) সুখদায়িণী (সুখ প্রদানকারিণি) মাতঃ (মা) ত (তোমার) জলমহিমা (জলের মহিমা) নিগমে (বেদে) খ্যাতঃ (প্রসিদ্ধ)। অহম্ (আমি) তব (তোমার) মহিমানম্ (মহিমা) ন জানে (জানি না) কৃপাময়ি (হে কৃপাময়ী) অজ্ঞানম্ (অজ্ঞান) মাম্ (আমাকে) পাহি (ত্রাণ করো)।
বঙ্গানুবাদ
হে সুখদাত্রী মা ভাগীরথী, তোমার জলের মহিমা বেদেও প্রসিদ্ধ। আমি তোমার মহিমা জানি না। হে কৃপাময়ী, অজ্ঞান আমাকে (তুমি) রক্ষা করো।
শ্লোক-৩
হরিপাদপদ্মতরঙ্গিণি গঙ্গে হিমবিধুমুক্তা
ধবলতরঙ্গে।
দূরীকুরু মম দুষ্কৃতিভারং কুরু কৃপয়া ভবসাগরপারম্।।
হরিপাদপদ্মতরঙ্গিণি হিমবিধুমুক্তাধবলতরঙ্গে গঙ্গে মম দুষ্কৃতিভারম্ দূরীকুরু। কৃপয়া (মাম) ভবসাগরপারম্ কুরু।
হরিপাদপদ্মতরঙ্গিণি (হরির পাদপদ্ম থেকে নদীরূপে প্রবাহিত) হিমবিধুমুক্তাধবলতরঙ্গে (তুষার, চন্দ্র ও মুক্তার ন্যায় শ্বেতবর্ণ তরঙ্গযুক্তা) গঙ্গে (হে গঙ্গা) মম (আমার) দুষ্কৃতিভারম্ (পাপভার) দূরীকুরু (দূর করো) কৃপয়া (অনুগ্রহ পূর্বক) (আমাকে) ভবসাগরপারম্ (ভবসাগর থেকে পার) কুরু (করো)।
হে গঙ্গা, তুমি হরিপাদপদ্ম থেকে নদীরূপে প্রবাহিত, তোমার তরঙ্গ তুষার, চন্দ্র এবং মুক্তার মতো শুভ্রবর্ণ। তুমি আমার পাপভার দূর করো। অনুগ্রহপূর্বক আমাকে ভবসাগর থেকে পার করো।
তব জলমমলং যেন নিপীতা পরমপদং খলু তেন গৃহীতম্।
মাতৰ্গঙ্গে ত্বয়ি যো ভক্তঃ কিল তং দ্রষ্টুং ন যমঃ শক্তঃ।।
সন্ধিবিযুক্ত অন্বয়
যেন তব অমলম্ জলম্ নিপীতম তেন খলু পরমপদম্ গৃহীতম্। মাতঃ গঙ্গে ত্বয়ি যঃ ভক্তঃ যমঃ কিল তম্ দ্রষ্টুম্ ন শক্তঃ।
যেন (সে) তব (তোমার) অমলম (নির্মল) জলম্ (জল) নিপীতম (পান করেছে) তেন (সে) খলু (অবশ্যই) পরমপদম্ (পরম পদ) গৃহীতম (পেয়েছে) মাতঃ (মা) গঙ্গে (গঙ্গা) ত্বয়ি (তোমাতে) যঃ (যে) ভত্তঃ (অনুরক্ত) যমঃ (যম) কিল (নিশ্চিত) তম (তাকে) দ্রষ্টুম্ (দেখতে) ন শক্তঃ (সক্ষম হয় না)।
যে তোমার নির্মল জল পান করে সে অবশ্যই পরমপদ লাভ করে। মা গঙ্গা, যে তোমার প্রতি ভক্তিমান যম নিশ্চয় তাকে দর্শন করতে সমর্থ হয় না।
পতিতোদ্ধারিণি জাহ্নবি গঙ্গে খণ্ডিতগিরিবর মণ্ডিতভঙ্গে।
ভীষ্মজননি হে মুনিবরকন্যে পতিতনিবারিণি ত্রিভুবনধন্যে।।
সন্ধিবিযুক্ত অন্বয়
হে পতিতোদ্ধারিণি জাহ্নবি গঙ্গে খণ্ডিত গিরিবরমণ্ডিতভঙ্গে ভীষ্মজননি মুনিবরকন্যে পতিতনিবারিণি ত্রিভুবনধন্যে।।
হে পতিতোদ্ধারিণি (পাপীগণের উদ্ধারকারিণী) জাহ্নবি (জাহ্নবী) গঙ্গে (গঙ্গা) খণ্ডিতগিরিবর মণ্ডিতভঙ্গে (তুমি গিরিরাজ হিমালয়কে বিদীর্ণ করে নির্গত হয়েছ, সেখানে তোমার তরঙ্গ বিবিধ শোভা ধারণ করেছে)। ভীষ্মজননি (তুমি ভীষ্মের মাতা) মুনিবরকন্যে (জহ্নুমুনির কন্যা) পতিতনিবারিণি (নরক থেকে উদ্ধারকারিণী) ত্রিভুবনধন্যে (ত্রিভুবনে প্রশংসনীয়া)।
হে জাহ্নবী গঙ্গা, তুমি পাপীগণের উদ্ধারকারিণী, তুমি গিরিরাজ হিমালয়কে বিদীর্ণ করে নির্গত হয়েছ, সেখানে তোমার তরঙ্গ বিবিধ শোভা ধারণ করেছে। তুমি ভীষ্মের মাতা এবং জহ্নুমুনির কন্যা, তুমিই নরক থেকে উদ্ধারকারিণী। তুমি ত্রিভুবনে প্রশংসনীয়া।
কল্পলতামিব ফলদাং লোকে প্রণমতি যস্ত্বাং ন পততি শোকে।
পারাবারবিহারিণি গঙ্গে বিমুখযুবতিকৃত তরলাপাঙ্গে ।।
লোকে কল্পলতাম ইব ফলদাম্ ত্বাম্ যঃ প্রণমতি (সঃ) শোকে ন পততি। পারাবারবিহারিণি গঙ্গে বিমুখযুবতিকৃততরলাপাঙ্গে।
লোকে (পৃথিবীতে) কল্পলতাম ইব (কল্পবৃক্ষতুল্য) ফলদাম্ (ইষ্টফলনদানকারিণী) স্বাম্ (তোমাকে) যঃ (যে ব্যক্তি) প্রণমতি (প্রণাম করে) (সে) শোকে (শোকে) ন পততি (পতিত হয় না) গঙ্গে (হে গঙ্গা) পারাবারবিহারিণি (তুমি যখন সমুদ্রের সঙ্গে বিহার কর) বিমুখযুবতিকৃত তরলাপাঙ্গে (তখন যুবতিরা চঞ্চল অপাঙ্গদৃষ্টির দ্বারা দেখে মুখ ফিরিয়ে নেয়।)
হে গঙ্গা, তুমি পৃথিবীতে কল্পবৃক্ষের মতো অভীষ্ট ফল দান কর। যে তোমাকে প্রণাম করে তাকে শোকসাগরে নিমজ্জিত হতে হয় না। তুমি যখন সমুদ্রের সঙ্গে বিহার কর (কেলি কর), তখন যুবতিগণ চঞ্চল অপাঙ্গ দৃষ্টির দ্বারা দেখে (ঈর্ষায়) মুখ ফিরিয়ে নেয়।
শ্লোক-৭
তব চেন্মাতঃ স্রোতঃ স্নাতঃ পুনরপি জঠরে সোংপি ন জাতঃ।
নরকনিবারিণি জাহ্নবি গঙ্গে কলুষবিনাশিনি মহিমোত্তুঙ্গে।।
সন্ধিবিযুক্ত অন্বয়
মাতঃ তব চেৎ স্রোতঃ স্নাতঃ সঃ অপি পুনঃ অপি জঠরে ন জাতঃ। নরকনিবারিণি জাহ্নবি গঙ্গে কলুষবিনাশিনি মহিমোত্তুঙ্গে।
শব্দার্থ
মাতঃ (মা) তব (তোমার) চেৎ (যদি) স্রোতঃস্নাতঃ (স্রোতে তথা জলে স্নান করা হয়)। সঃ অপি (সেও) পুনঃ অপি (পুনরায়) জঠরে (মাতৃগর্ভে) ন জাতঃ (জন্মগ্রহণ করে না)। নরকনিবারিণি (হে নরকনিবারিণী) জাহ্নবি (জাহ্নবী) গঙ্গে (গঙ্গা) কলুষবিনাশিনি (তুমি পাপনাশিনী) মহিমোত্তুঙ্গে (মহিমাতে তুমি সর্বশ্রেষ্ঠা)।
বঙ্গানুবাদ
মা, তোমার জলে যে স্নান করে, সে আর পুনরায় জননীগর্ভে জন্মগ্রহণ করে না। হে নরকনিবারিণী জাহুবী গঙ্গা, তুমি পাপনাশিনী। মহিমাতে তুমি সর্বশ্রেষ্ঠা।
শ্লোক-৮
পুনরসদঙ্গে পুণ্যতরঙ্গে জয় জয় জাহ্নবি করুণাপাঙ্গে।
ইন্দ্রমুকুটমণি রাজিতচরণে সুখদে শুভদে ভৃত্যশরণ্যে ।।
সন্ধিবিযুক্ত অন্বয়
পুনরসদঙ্গে পুণ্যতরঙ্গে করুণাপাঙ্গে জাহ্নবি জয় জয়। ইন্দ্রমুকুটমণিরাজিতচরণে সুখদে শুভদে ভৃত্যশরণ্যে ।
পুনঃ (আবার) অসদঙ্গে (হে বিদেহী) করুণাপাঙ্গে (তোমার কটাক্ষ করুণায় ভরা) জাহ্নবি (হে জহ্নুমুনিকন্যা) জয় জয় (তোমার জয় হোক) ইন্দ্রমুকুটমণিরাজিত চরণে (তোমার চরণদ্বয় ইন্দ্রের মুকুটস্থিত মণির আলোকে রঞ্জিত) সুখদে (তুমি সুখদায়িনী) শুভদে (তুমি মঙ্গলকারিণী) ভৃত্যশরণ্যে (ভক্তগণের আশ্রয়দায়িনী)।
বঙ্গানুবাদ
হে বিদেহী, তোমার কটাক্ষ করুণায় ভরা। হে জহ্নুমুনিকন্যা তোমার জয় হোক। তোমার তরঙ্গ পবিত্র। তোমার চরণদ্বয় ইন্দ্রের মুকুটস্থিত মণির আলোকে রঞ্জিত। তুমি সুখদায়িনী এবং মঙ্গলকারিণী। তুমি ভক্তগণের আশ্রয়দায়িনী।
শ্লোক-৯
রোগং শোকং তাপং পাপং হর মে ভগবতি কুমতিকলাপম্।
ত্রিভুবনসারে বসুধাহারে ত্বমসি গতিমন খলু সংসারে।।
সন্ধিবিযুক্ত অন্বয়
ভগবতি, মে রোগম্ শোকম্ তাপম্ পাপম্ কুমতিকলাপম্ হর। ত্রিভুবনসারে বসুধাহারে তুম্ খলু সংসারে মম গতিঃ অসি।
শব্দার্থ
ভগবতি (হে ভগবতী) মে (আমার) রোগম্, (রোগ) শোকম্ (শোক) তাপম্ (হৃদয়ের সন্তাপ) পাপন, (পাপ) কুমতিকলাপ (কুমতিসমূহ) হর (হরণ করো) ত্রিভুবনসারে (তুমিই ত্রিভুবনের শ্রেষ্ঠা) বসুধাহারে (তুমি পৃথিবীর কণ্ঠহারস্বরূপ) মম (তুমি) খলু (অবশ্যই) সংসারে (এ জগতে) মম (আমার) গতিঃ (উদ্ধারকর্ত্রী) অসি (হও)।
বঙ্গানুবাদ
হে ভগবতী, তুমি আমার রোগ, শোক, মনের সন্তাপ, পাপ এবং কুমতিসমূহ হরণ করো। তুমি ত্রিভুবনে শ্রেষ্ঠা, তুমি পৃথিবীর কণ্ঠহারস্বরূপা। এই জগৎ সংসারে তুমিই হচ্ছে আমার একমাত্র গতি।
শ্লোক-১০
অলকানন্দে পরমানন্দে কুরু করুণাময়ি কাতরবন্দ্যে।
তব তটনিকটে যস্য নিবাসঃ খলু বৈকুণ্ঠে তস্য নিবাসঃ ।।
সন্ধিবিযুক্ত অন্বয়
অলকানন্দে পরমানন্দে কাতরবন্দ্যে করুণাময়ি (করুণাং) কুরু। তব তটনিকটে যস্য নিবাসঃ তস্য খলু বৈকুণ্ঠে নিবাসঃ।
শব্দার্থ
অলকানন্দে (কৈলাসপুরীর আনন্দদায়িনী) পরমানন্দে (পরম আনন্দময়ী) কাতরবন্দ্যে (ব্যাকুলজনের বন্দনীয়া) করুণামরি (মমতাময়ী) করুণাং (তুমি আমার প্রতি করুণা) কুরু (করো)। তব (তোমার) তট নিকটে (তীরের নিকটে) যস্য (যাহার) নিবাসঃ (বাস) তস্য (তাহার) খলু (অবশ্যই) বৈকুণ্ঠে (বৈকুণ্ঠে) নিবাসঃ (বাস)।
বঙ্গানুবাদ
(হে দেবি) তুমি কৈলাসপুরীর আনন্দদায়িনী, পরম আনন্দময়ী, ব্যাকুলজনের বন্দনীয়া এবং মমতাময়ী (তুমি আমার প্রতি) করুণা করো। তোমার তীরের নিকটে যে বাস করে, সে নিশ্চয়ই বৈকুণ্ঠে বাস করে।
0 Comments