স্বপ্নবাসবদত্তা
মহাকবি ভাসের রচিত বলে পরিচিত ১৩খানি নাটকের মধ্যে 'স্বপ্নবাসবদত্তম্' নাটকখানি সর্বোৎকৃষ্ট। উদয়ন, বাসবদত্তা এবং পদ্মাবতীর কাহিনি অবলম্বনে রচিত এটি ছয় অঙ্কবিশিষ্ট নাটক। পদ্মাবতীর সঙ্গে বিবাহ হলে উদয়নের ভাগ্যোদয় হবে এই ভবিষ্যদ্বাণী বিশ্বাস করে বিচক্ষণ মন্ত্রী যৌগন্ধরায়ণ অগ্নিকাণ্ডের মিথ্যা ঘটনার ছলে নিজের এবং বাসবদত্তার মৃত্যুর ঘটনা রটনা করে দিয়ে বাসবদত্তাকে ছদ্মবেশে আবন্তিকা নামে তপােবনে আগতা রাজকন্যা পদ্মাবতীর কাছে ন্যাসরূপে রেখে দিলেন। পদ্মাবতী আবন্তিকাকে সঙ্গে নিয়ে মগধের প্রাসাদে ফিরে গেলেন। ঘটনাক্রমে মগধরাজকন্যা পদ্মাবতীর সঙ্গে বৎসরাজ উদয়নের বিবাহ হল। অন্যদিকে উদয়ন মন থেকে প্রাণপ্রিয়া বাসবদত্তাকে ভুলতে পারেননি। তাঁর জীবনের প্রতিটি পাতায় বাসবদত্তা অঙ্কিত আছেন। বাসবদত্তার প্রতি তাঁর এই অনুরাগ ও ভালােবাসা পদ্মাবতীর মনকে আহত করেনি; বরং তিনি মনে মনে উদয়নের এই অনুরাগ ও ভালােবাসাকে প্রশংসা করেছেন।
একদিন প্রিয়সখী পদ্মাবতীর অসুস্থতার সংবাদ পেয়ে এবং পদ্মাবতী সমুদ্রগৃহে শয়ে আছেন এই সংবাদ দাসীমুখে শুনে আবন্তিকা তথা বাসবদত্তা পদ্মাবতীর সঙ্গে দেখা করার জন্য সমুদ্রগৃহে যান। ঘটনাচক্রে সেই শয্যায় নিদ্রিত ছিলেন উদয়ন। উদয়ন নিদ্রিত অবস্থায় বাসবদত্তাকে স্বপ্নে দেখেন। বাসবদত্তা যে সশরীরে সেখানে বর্তমান তা উদয়ন জানতে পারেননি। স্বপ্নে বাসবদত্তাকে দর্শন করেছিলেন বলে নাটকটির নাম রাখা হয়েছে 'স্বপ্নবাসবদত্তম্'।
যাই হােক উদয়নের রাজ্যচ্যুতি, বাসবদত্তার অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু এবং পদ্মাবতীর সঙ্গে উদয়নের বিবাহ এই সমস্ত সংবাদই বাসবদত্তার মাতা-পিতা অবগত হয়ে উদয়ন ও বাসবদত্তার তৈলচিত্রটি তাঁরা ধাত্রীর মাধ্যমে উদয়নের কাছে পাঠিয়ে দেন। সেই চিত্রে বাসবদত্তার ছবি দেখে পদ্মাবতী তাঁকে চিনতে পারেন। পরিশেষে বাসবদত্তার সঙ্গে উদয়নের পুনর্মিলন হয়। সেই সময় পরিব্রাজকের ছদ্মবেশে মন্ত্রী যৌগন্ধরায়ণ উপস্থিত হলেন এবং কৃতকর্মের জন্য রাজার নিকট ক্ষমা ভিক্ষা করলেন। উদয়ন বুঝতে পারলেন শত্রু আরুণিকে পরাজিত করার উদ্দেশ্যেই যৌগন্ধরায়ণ পদ্মাবতীর সঙ্গে তাঁর বিবাহ সম্পাদন করে মগধরাজের মৈত্রী অর্জন করেছেন।
স্বপ্নের মাধ্যমে বাসবদত্তার সান্নিধ্যলাভ এবং ঘটনাচক্রের বিবর্তনে নায়ক-নায়িকার পুনর্মিলন নাটকের মূল বক্তব্য; তাই স্বপ্নবাসবদত্তা নামকরণ সার্থক হয়েছে। প্রাচীন আলংকারিকদের বিবিধ উদ্ধৃতি এবং সমালােচকদের সপ্রশংস উল্লেখ থেকে নিঃসন্দেহে বলা যায় এই মিলনান্তক নাটকটি ভাসের শ্রেষ্ঠ কীর্তি এবং এটি ভাসকে সংস্কৃত সাহিত্য-জগতে সবিশেষ প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। রাজশেখর বলেছেন –
"ভাসনাটকচক্ৰেহপি চ্ছেকৈঃ ক্ষিপ্তে পরীক্ষিতুম্।স্বপ্নবাসবদত্তস্য দাহকোহভূন্ন পাবকঃ ।।''
অর্থাৎ ভাসের নাটক সমালােচনার আগুনে দগ্ধ হলেও তাঁর রচিত স্বপ্নবাসবদত্তা নাটকটি সম্পূর্ণ অক্ষত ছিল।
0 Comments