বাসন্তিকস্বপ্নম্ নাটকের বাংলা অনুবাদ | উচ্চ-মাধ্যমিক সংস্কৃত পাঠ্যাংশ বাসন্তিকস্বপ্নম নাটকের বঙ্গানুবাদ



 রাজা:- প্রিয়ে কনকলেখা, এই অমাবস্যা আর বেশি দূরে নয়, চার দিন পরেই অমাবস্যা। তথাপি বিষাদক্লিষ্ট আমি। কামপীড়িত হয়ে বাস করছি। চন্দ্রও অতিনিষ্ঠুর। যেহেতু সে ক্ষীয়মাণ হয়েও আমার ক্ষেত্রে দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে না। হে সখি, আমাদের বিবাহ ব্যাপারে আমি অত্যন্ত উৎসুক হয়ে পড়েছি। হে সুন্দরী, কী করি? এক দণ্ড সময়ও (আমার কাছে) এক যুগ বলে মনে হচ্ছে।

 কনকলেখা:- প্রিয়তম, চারটে দিন প্রায় চারটে রাত্রি হয়ে আমাদের ঘুমােতে ঘুমােতে কেটে যাবে এবং অচিরেই সে অমাবস্যা নিয়ে আসবে, যার রাত্রে আমাদের দুজনের বিবাহরূপ মহােৎসব অনুষ্ঠিত হবে। অতএব মহারাজ কেন কষ্ট পাচ্ছেন?

 রাজা:- ওহে প্রমােদ, এখনই আমাদের নগরের প্রতিটি পথে পথে যাও। সেরূপ করাে যাতে সকল যুবকই মহােৎসবে অভিনিবিষ্ট চিত্ত হয়ে পরমানন্দে মত্ত হয়ে থাকে। দুঃখ দূর করে দাও। বৈবস্বত নগরটি আনন্দে সর্বতােভাবে ভরে দাও।

 প্রমােদ:- প্রভু যেরূপ আদেশ করেন। (এই কথা বলে প্রণাম করে চলে গেল।)

 রাজা:- প্রণয়িনী কনকলেখা, অতএব এখন সেই অপ্রশস্ত (অপ্রশংসনীয়) পথ ত্যাগ করে মহােৎসবের দ্বারা আনন্দ সম্পাদনপূর্বক তােমাকে বিবাহ করব। [নেপথ্যে পদশব্দ শুনে ভালােভাবে দেখে] এই আগমনকারী বৃদ্ধকে কেন ক্রোধ এবং শােকাবিষ্টের মতাে দেখাচ্ছে? তার পিছনে কোনাে এক চন্দ্রাননা (যুবতী)।

[তারপর ইন্দুশর্মা ও কৌমুদী প্রবেশ করল।]

 ইন্দুশর্মা:- (হাত তুলে) আমাদের রাজামশায়ের জয় হােক।

 রাজা:- ইন্দুশর্মা, তােমাক প্রণাম। কোন কর্মের জন্য আপনাকে ব্যথিত বলে মনে হচ্ছে?

 ইন্দুশর্মা:- রাজন, আমার এই কন্যা আমার আজ্ঞাকে লঙ্ঘন করতে উদ্যত হয়েছে। মহারাজ, আমি সেই জন্যই অতি দুঃখিত। আপনার অনুকম্পা আমাকে দান করুন। (অথবা দয়া করে আমার কথা মন দিয়ে শুনুন)। যেহেতু এই হতভাগিনী মকরন্দকে বিবাহ করে আমার মতের অনুবর্তন করছে না, সেই হেতু আমাদের দেশাচার অনুসরণ। করে পিতার আজ্ঞা লঙ্ঘনকারী সন্তানকে যেদণ্ড দেওয়া উচিত এই কন্যা সেই দণ্ড অনুভব করুক -এরূপ আজ্ঞা দিয়ে আমাকে অনুগ্রহ করুন -এই প্রার্থনা জানাচ্ছি।

 রাজা:- (কৌমুদীকে উদ্দেশ্য করে) বালিকে বলাে, নিয়মের বিরুদ্ধাচরণ করা কি ঠিক হচ্ছে? তা ছাড়া তােমার পাত্র মকরন্দও তাে মনােরম (সুদর্শন)।

 কৌমুদী:- রাজন, বসন্তও তাই।

 রাজা:- বালিকে, বসন্ত প্রিয়দর্শন হলেও যেহেতু মকরন্দের প্রতি পিতা পক্ষপাতী (সেই হেতু), মকরন্দ তােমার অধিক প্রিয়তর (হওয়া উচিত)।

 কৌমুদী:- যদি আমার পিতা আমার চোখ দিয়ে দেখতেন, তা হলে তিনি বসন্তকেও সম্মান করতেন (অর্থাৎ আমার পাত্ররূপে যােগ্য বিবেচনা করতেন)। আমি মনে মনে তাকেই চাই।

 রাজা:- কিন্তু পিতার বিবেচনাকে মান্য দিয়ে তােমার দেখা উচিত। 

 কৌমুদী:- দয়ার সাগর, এই দাসীর অপরাধ ক্ষমা করবেন। জানি না কী হেতু আমার মনে এই সিদ্ধান্ত জন্মাল। আমার এখন কী করা উচিত তা ভুলে যাচ্ছি।

 রাজা:- মহাশয়ে, তােমার দেহখানি সুঠাম। বয়সও যৌবনপ্রাপ্ত। যদি পিতার মতের অনুবর্তন না কর, তাহলে মৃত্যুই তামার আশ্রয়স্থল (অর্থাৎ মৃত্যুই তােমার দণ্ড) অথবা যাবজ্জীবন কৌমার্য। এরূপ বংশের আচার নিয়মভঙ্গকারিণীর সুখ। কাথায় ? তােমার এই সিদ্ধান্ত কল্যাণকর নয় আর সুখাবহও নয়। অতএব পিতার আদেশ তােমার পালন করা উচিত।

 কৌমুদী:- মহারাজ, বসন্তকে ছাড়া অন্য কাকেও আমি (বিবাহযােগ্য) বলে দেখছি না। তার জন্য জীবনও ত্যাগ করতে পারি, বা যতদিন বাঁচব বিবাহ না-করেই জীবন কাটাতে পারি। এটাই এই হতভাগিনীর থির সংকল্প।

(নেপথ্যে মৃদঙ্গধ্বনি শােনা গেল)

 কনকলেখা:- মহারাজ, সংগীতশালার ভেতরে অনেকেই আমাদের উপস্থিতির অপেক্ষায় আছেন।

 রাজা:- কিন্তু কার্যের অনুরােধে এই সব কিছুই ভুলে গেছি। অতএব এখনই তাড়াতাড়ি যাচ্ছি। শােনাে কৌমুদী, ভালােভাবে চিন্তা করে তােমার পিতার প্রস্তাবই মেনে নাও; তা না-হলে মৃত্যুদণ্ড গ্রহণ করাে। এটাই আমাদের দণ্ডনীতি বলে জেনে রেখাে। প্রিয় কনকলেখা, এখন আমরা চলাে। 

(সকলে চলে গেলেন।)

Post a Comment

0 Comments