মুদ্রারাক্ষস
বিশাখদত্ত
নাটকের কাহিনি-
চাণক্যের সহায়তায় চন্দ্রগুপ্ত নন্দবংশ ধ্বংস করে মগধের সিংহাসনে আরােহণ করেন। নন্দবংশ ধ্বংস হলে নন্দদের বিশ্বস্ত মন্ত্রী রাক্ষস রাজ্য থেকে পলায়ন করে অন্যদেশের রাজাদের সহায়তায় প্রতিশােধ কল্পে। চন্দ্রগুপ্তের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করতে সচেষ্ট হন। যাবার সময় স্ত্রী-পুত্রকে তাঁর প্রিয়বন্ধু শকটদাসের ঘরে রেখে যান। এদিকে চাণক্য ছলে-বলে-কৌশলে রাক্ষসকে বন্দি করতে এবং চন্দ্রগুপ্তের মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করাতে বদ্ধপরিকর হন। তিনি রাক্ষসের সন্ধানে নানাদিকে চর প্রেরণ করেন। চাণক্যের এক গুপ্তচর সাপুড়িয়ার বেশে সাপ খেলাতে খেলাতে শকটদাসের গৃহে উপস্থিত হয়। রাক্ষসের শিশুপুত্র সাপখেলানাে দেখতে দেখতে সাপের কাছে উপস্থিত হলে রাক্ষসের স্ত্রী ভীত-চকিত হয়ে পুত্রকে সবেগে টেনে আনতে গেলে অলক্ষ্যে তার আঙুলে থাকা রাক্ষসের নামাঙ্কিত আংটিটি পড়ে যায়। গুপ্তচর সেই আংটিটি চাণক্যকে দিলে চাণক্য বুঝতে পারেন যে শকটদাস রাক্ষসের স্ত্রী-পুত্রের আশ্রয়দাতা। তিনি শকটদাসকে বন্দি করেন। রাক্ষস পর্বতক নামক পার্বত্য রাজার পুত্র মলয়কেতু ও অন্যান্য কতিপয় রাজার সঙ্গে মিলিত হয়ে চন্দ্রগুপ্তকে আক্রমণ করার প্রস্তুতি নেন। চাণক্যের গুপ্তদূত ভাগুরায়ণের কূট চক্রান্তে রাক্ষস ও মলয়কেতুর বিরােধ বাধল এবং রাক্ষস বারংবার স্বকার্য সাধনে ব্যর্থকাম হলেন। চাণক্য ও রাক্ষস, চন্দ্রগুপ্ত ও মলয়কেতু পরস্পর পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। ভাগুরায়ণ ও সিদ্ধার্থক চাণক্যের গুপ্তচর এবং বিরাধগুপ্ত ও শকটদাস রাক্ষসের গুপ্তচর। চাণক্য। ঘােষণা করলেন যে রাক্ষস নিজে ধরা না দিলে শকটদাসের প্রাণদণ্ড দেওয়া হবে। সেই মতাে শকটদাসকে বধ্যভূমিতে আনয়ন করা হল। তখন তাঁর প্রতিপক্ষ রাক্ষস ভগ্নোদ্যম হয়ে প্রিয়বন্ধু শকটদাস ও পরিজনদের প্রাণরক্ষায় বাধ্য হয়ে চাণক্যের কাছে ধরা দিলেন এবং অনিচ্ছা সত্ত্বেও চন্দ্রগুপ্তের মন্ত্রীপদ গ্রহণে সম্মত হলেন। চাণক্যের কূট রাজনীতির বিজয়ের সঙ্গে নাটকের পরিসমাপ্তি সুচিত হল।
চাণক্য কূটকৌশলে নামমুদ্রা-চিহ্নিত আংটি হস্তগত করে মিথ্যা ছলনায় রাক্ষসকে নন্দদের পক্ষ ত্যাগ করে। চন্দ্রগুপ্তের পক্ষ অবলম্বন করতে বাধ্য করেন। তাই নাটকটির নাম হয়েছে মদ্রারাক্ষস। নাটকটির নামের অর্থ হল। মুদ্রার ছলনায় পরাজিত বা বিপক্ষ থেকে স্বপক্ষে আনীত রাক্ষস।।
নাটকের উৎকর্ষ-
সংস্কৃত সাহিত্যে বীররসপ্রধান স্ত্রীভূমিকাবর্জিত একমাত্র নাটক হল মুদ্রারাক্ষস। বিশাল নাটক রচনার ক্ষেত্রে এক নতুন ধারার প্রবর্তন করেছেন। গতানুগতিক প্রণয় কাহিনিকে উপেক্ষা করে এক নতুন আঙ্গিকে নাটক রচনা করে পাঠক রুচির দরবারে যে উপহারের ডালি ধরিয়ে দিলেন তা একেবারেই অপ্রত্যাশিত। প্রণয়ের নামগন্ধ না রেখে স্ত্রীচরিত্র বর্জিত করে নায়িকাবিহীন নাটকও যে রচিত হতে পারে তা পাঠকগণ এই সর্বপ্রথম দেখলেন। এটা নিঃসংশয়ে নাট্যকারের এক চরম দুঃসাহস বলা যায়। রাজনীতির জটিলতাকে বিষয়বস্তুরূপে গ্রহণ করে। মুদ্রারাক্ষস রচিত হয়েছে এবং যে ঘটনার সমাবেশে এই জটিলতার সৃষ্টি করা হয়েছে -সেটাই পাঠকচিত্তের সর্বাপেক্ষা। বড়াে আকর্ষণ। একটি চরিত্রকে আর একটি চরিত্রের প্রতিযােগীরুপে চিত্রিত করে বিশাখদত্ত উভয়েরই স্বাতন্ত্র্য ফুটিয়ে তলেছেন। চাণক্য ও রাক্ষস উভয়েই ধুরন্ধর, বিচক্ষণ রাজনীতিজ্ঞ, শাসনক্ষমতায় দক্ষ, একনিষ্ঠ অধ্যবসায়ী। কিন্তু চাণক্য ধীর-স্থির, থিতপ্রজ্ঞ, সদাসতর্ক এবং আত্মপ্রত্যয়ে দৃঢ়নির্ভর। তার তুলনায় রাক্ষস অপেক্ষাকৃত কোমলপ্রাণ, কিঞ্চিত ভাবপ্রবণ এবং সংকটময় মুহূর্তে আত্মবিশ্বাসে সন্দেহপ্রবণ। চাণক্যের ক্ষুরধার শাণিত বুদ্ধির নিকট সকলেই বিমূঢ়। নাটকের অন্যান্য চরিত্রগুলিও স্ব স্ব বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল।
এই নাটকে গীতিধর্মিতার পরিবর্তে ওজস্বী ভাষার গ্রন্থনায়, রাজনীতির রােমাঞ্চকর ঘাতপ্রতিঘাতে নাট্যবস্তু এমনভাবে বিন্যস্ত যেন দাবার কূটচালের মতাে আদ্যন্ত পরিচালিত ; আর সেই চালে চাণক্যই বিজেতা।
---------○---------
(বিঃদ্রঃ- উক্ত অংশের Pdf পেতে WhatsApp করতে পারেন।)
WhatsApp- 7364004856
0 Comments