ভারতীয় আর্যভাষা কাকে বলে ? এই ভাষার ক-টি স্তর? প্রতি স্তর সম্পর্কে অতি সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও। | ভাষাতত্ত্ব


প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা | মধ্য ভারতীয় আর্যভাষা | নব্য ভারতীয় আর্যভাষা

ভারতীয় আর্যভাষা কাকে বলে ? এই ভাষার ক-টি স্তর? প্রতি স্তর সম্পর্কে অতি সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও।

উত্তর:- অন্তত তিন হাজার বছর আগে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে একদল মানুষ ভারতে প্রবেশ করে। সেই মানবগােষ্ঠীই ‘আর্য’ নামে পরিচিত। এই গােষ্ঠীর এক অংশ মধ্য এশিয়ায় পড়ে রইল। অপর যে-দলটি ভারতে এসে পৌছােল তাদের বলা হল “ইন্দো-আরিয়ান”। এই ইন্দো-আরিয়ান ভাষাগুলির মধ্যে প্রাচীনতম হল ঋগবেদের ভাষা তথা ভারতীয় আর্যভাষা। এই ভারতীয় আর্যভাষার তিনটি স্তর। যথা-

(১) প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা (খ্রি: পূ: ১৫০০ থেকে খ্রি: পূ. ৬০০/৫০০) 

(২) মধ্য ভারতীয় আর্যভাষা (খ্রি: পূ. ৬০০/৫০০ থেকে খ্রীস্টীয় ১০০০ অব্দ)

(৩) নব্য ভারতীয় আর্যভাষা (খ্রি: ১০০০ থেকে অদ্যাবধি) 


প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা- প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষাকে প্রাচীন বৈদিক, অর্বাচীন বৈদিক, শিষ্ট বাসাধু সংস্কৃত এবং কথ্য বা জানপদ সংস্কৃতে ভাগ করা যায়। বৈদিক মন্ত্র, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, উপনিষদ ও সূত্র সাহিত্যের ভাষা প্রাচীন ও অর্বাচীন বৈদিকের অন্তর্গত। শিষ্ট বা সাধু সংস্কৃত রামায়ণ, মহাভারত, গাথা সংস্কৃত, অশ্বঘােষ ও ভাসের নাটক, পুরাণ, জাতক-অবদান এবং পরবর্তী সংস্কৃত সাহিত্যে অনুশীলিত। কথ্য সংস্কৃতের কোনাে লেখ্য রূপ পাওয়া যায় না। তবে শিষ্ট সাধুভাষা ছিল ব্যাকরণের অনুশাসনে নিয়ন্ত্রিত উচ্চস্তরের সাহিত্যিক ভাষা। তার সঙ্গে পরে উপভাষাগত কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য মিলেমিশে ওই ভাষাকে কিছুটা ক্ষুন্ন করছিল এবং কালান্তরের ব্যবধানে অঞ্চলভেদে পরিবর্তিত ভাষার সান্নিধ্যে কিছু নতুন বৈশিষ্ট্য আরােপিত হয়ে সৃষ্ট হল কথ্য ভাষা বা জানপদ ভাষা। 


মধ্য ভারতীয় আর্যভাষা-  মধ্য ভারতীয় আর্যভাষার তিনটি স্তর।

(১) প্রথম স্তর (খ্রি: পূ: ৬০০ থেকে ২০০ খ্রি:)

(২) দ্বিতীয় স্তর (খ্রি. ২০০ থেকে খ্রি. ৬০০)

(৩) তৃতীয় স্তর (খ্রি. ৬০০ থেকে খ্রি. ১০০০)

অশােকের শিলালেখ, অশ্বঘােষের নাটকে ব্যবহৃত প্রাকৃত, হীনযানী বৌদ্ধ আগমের পালি, জৈন আগমের অর্ধমাগধী এবং বৌদ্ধ বা মিশ্র সংস্কৃত প্রথম স্তরের পর্যায়ে পড়ে। ১ম থেকে ৩য় খ্রিস্টাব্দের প্রত্নলিপি, জৈন সাহিত্যে ব্যবহৃত প্রাকৃত, কালিদাস ও তৎপরবর্তী নাট্যকারগণের নাটকে ব্যবহৃত সাহিত্যিক প্রাকৃত (অর্থাৎ মহারাষ্ট্রী, শৌরসেনী, মাগধী প্রভৃতি), বৃহৎকথা, সযগাথা সপ্তশতী ও অন্যান্য প্রাকৃত সাহিত্য দ্বিতীয় স্তরের অন্তবর্তী। তৃতীয় স্তরে পড়ে অপভ্রংশ। কারও কারও মতে অপভ্রংশ প্রাকৃতের অন্তিম স্তর। অপভ্রংশের পরের স্তরকে বলা হয় অবহট্ট।


নব্যভারতীয় আর্যভাষা- নব্য ভারতীয় আর্যভাষার মধ্যে পড়ে ভারতবর্ষের বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষাসমূহ। প্রাচীন। ভারতীয় আর্যভাষা থেকে একই ভাষার তিনটি স্তরের মধ্যে দিয়ে ক্রমে ক্রমে বিবর্তিত হয়ে আধুনিক ভারতীয় ভাষাগুলি রূপ পরিগ্রহ করেছে। এই ভাষাগুলির মধ্যে সিন্ধি, সিংহলি, মারাঠি, বাংলা, অসমিয়া, ওড়িয়া, বিহারি প্রভৃতি অধুনান্তন আঞ্চলিক ভাষাগুলি বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। এই নব্য ভারতীয় আর্যভাষাগুলির উদ্ভব খ্রিস্টীয় ১০০০ অব্দ থেকে অদ্যাবধি।

Post a Comment

0 Comments